সন্ত্রাসের পথ ইসলামের পথ নয় [২]

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

ইসলাম শান্তির ধর্ম
আসলে ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মকে পাঠিয়েছেন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য। মহাগ্রন্থ আল কোরআনকে তিনি উল্লেখ করেছেন মানুষের জন্য শান্তি ও রহমাতের উৎস হিসেবে। মহানবী সম্পর্কেও তিনি বলেছেন যে, মহানবীকে তিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ছিল মহানবীর মিশন। যেমন আল কোরআনে বলা হয়েছে : 
‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল আমার রহমতরূপেই প্রেরন করিয়াছি।’-[আল আম্বিয়া : ১০৭] ।
ইসলাম তো এসেছে পৃথিবীতে একটি শান্তির পরিবেশ তৈরি করার জন্য। অল্লাহ’র নবী যে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে সমাজ তো ছিল সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সমাজ, সে সমাজ ছিল হক ও ইনসাফ-ভিত্তিক সমাজ। মানুষের মধ্যে প্রেম, ভালোবাসা, সৌজন্যবোধ ও স্বর্গীয় বোধগুলোকে জীবন্ত করে তোলাই ছিল তাঁর জীবনাদর্শ। মানবীয় মাহাত্ম ও নৈতিক চরিত্রের পূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্যই তো তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি তো এসেছিলেন মানুষকে ইনসানে কামেলে পরিণত করার জন্য। আর মানুষের প্রতি দয়া-মায়া ও মানুষের কল্যাণ কামনা তো একজন মহৎ মানুষের প্রধান গুণ। সুশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ তো কেবল মানুষের বিবেকবোধের লালনের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে। কেননা, ভালোবাসাই ভালোবাসার জন্ম দেয়, আর হিংসা কেবল হিংসারই জন্ম দিয়ে থাকে। পৈশাচিকতার মাধ্যমে মানবতার ও সত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, বরং এর মাধ্যমে সত্যের শুভ্র সফেদ মুখকে কলংকিত করা হয়। আর এ কারণেই তো মহানবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবীদের (সাথীদের) প্রতি মহান রাব্বুল আ’লামীনের নির্দেশ ছিল সত্যের সাক্ষী হওয়ার, আদর্শের মডেল হওয়ার জন্য; আদর্শকে বিতর্কিত ও কলংকিত করার জন্য নয়। 

নৈতিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠনই ইসলামের পথ
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বপ্রথম সমাজের লোকদেরকে আদর্শের ধারক-বাহক হতে হয়। অর্থাৎ, সমাজ-মানসের ব্যাপক পরিবর্তন ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে না। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে প্রচলিত ভূল ধারনার অপনোদনই শুধু নয়; নৈতিকতা ও স্বভাব-চরিত্রের পুনর্গঠন ও পরিশোধনও জরুরী। ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য এমন এক নৈতিক শক্তির প্রয়োজন - যে নৈতিকতার বলে ব্যক্তি ও সমাজ-সংগঠনকে সম্পূর্ণভাবে আদর্শের আলোকে সজ্জিত ও বিন্যস্ত করা সম্ভব হবে। যার ফলে সমাজের লোকেরা সব ধরনের লোভ-লালসা ও দুর্নীতি থেকে পরহেজ করে আদর্শের পথে অবিচল থাকতে পারবে, নিষ্টার সাথে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে। এভাবে নৈতিক বিপ্লব করা গেলে সমাজ সংস্কার ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে লোকেরা অপরিসীম ত্যাগ ও কোরবানী প্রদান করতেও সব সময় প্রস্তুত থাকবে। শুধু তাই নয়, ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্যও তখন জনগণ আল্লাহ্র পথে জিহাদ ও শাহাদাতের প্রেরণা নিয়েই এগিয়ে আসবে। এ কারণেই সমাজ পরিবর্তন; ইসলামী সমাজ প্রবর্তন তথা গণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সবার আগে নৈতিক বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেছেন-
‘আল্লাহ্ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতির ভাগ্যের (অবস্থার) পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না সে জাতির লোকেরা নিজেদের অবস্থার (গুণাবলী) পরিবর্তনে উদ্যোগী না হয়।’- [আর রা’দ : ১১]।
এ কারণে আমরা দেখি, শুধু দাওয়াত প্রদানই নয়, আত্মগঠন ও সমাজ-সংস্কারও ছিল মহানবীর জীবনের অন্যতম প্রধান মিশন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেছেন :
‘যেমন আমি তোমাদের প্রতি তোমাদেরই মধ্য হইতে একজন রাসূল প্রেরণ করিয়াছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়িয়া শোনায়, তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও উৎকর্ষিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয় এবং যাহা তোমাদের অজ্ঞাত তাহাও  শিক্ষা দেয়।’ -[বাকারা : ১৫১];
‘তিনি সেই সত্তা যিনি নিরক্ষরদের মধ্য হইতে একজন রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন। যে তাহাদেরকে তাঁহার আয়াতসমূহ পড়িয়া শোনায, তাহাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে তাহারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত রহিয়াছিল।’ -[জুমুয়া : ২];
মহানবী নিজেও পবিত্র কালামের আলোকে তাঁর জীবন মিশন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন : ‘নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্যই আমি আবির্ভূত হয়েছি।’
কিন্তু সমাজ মানসের ব্যাপক পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং নেতৃত্বের পরিবর্তন না করে বিক্ষিপ্ত ভাবে নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়ার চেষ্টা করা, কিংবা জোর করে আল্লাহ্র বিধান মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা, বিচারক হত্যা করা, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন পরিচালনা করা কোন গ্রহণযোগ্য পথ নয় এবং ইসলামের শিক্ষাও এটি নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কখনো এ ধরনের পন্থা অবলম্বন করেননি।

Comments

Popular posts from this blog

ক্যারিয়ার গাইড: টেলিসেলস এক্সিকিউটিভ/কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি

যৌবনের যত্ন [চার]: পুরুষ হরমোন ঘাটতির ১০টি লক্ষণ

ডাটা এন্ট্রি: কর্মসংস্থানের সহজ মাধ্যম