যৌবনের যত্ন

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন:

মানুষের জীবনে যৌবন আসে অফুরন্ত  প্রাণ-চাঞ্চল্যে ও শক্তি-সামর্থের সম্ভাবনা নিয়ে।তবে, তা নির্ভর করে যৌবনের যথাযথ বিকাশের উপর।কোন কারণে যদি এই বিকাশ ব্যাহত হয়, তাহলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বিপুল সম্ভাবনা, বঞ্চিত হতে হয় জীবনের অফুরন্ত সুখ ও আনন্দ থেকে। যৌবন আসে অনেকটা যোয়ারের মত করে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে।এটি আসে অনেকটা যোয়ারের মত, একটি নির্দিষ্ট সময়কালে।বলা যায়, যৌবনের মত মহামূল্যবান সম্পদটি মানুষ লাভ করে একেবারেই অনায়াসে।আর এই অনায়াসে লাভ করার কারণেই এর সঠিক মূল্যায়ন করতে, এর প্রতি সুবিচার করতে এবং এর সঠিক যত্ন নিতে আমরা ব্যর্থ হই। কিন্তু এই অবহেলা আর বেখেয়ালের খেসারত আমাদের দিতে হয় কড়ায় গন্ডায়।কারণ, যৌবন যেমন যোয়ারের মত আসে, তেমনি আবার ভাটার টানে চলেও যায়।কথায় আছে, মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না।যখন দাঁত পড়ে যায়, তখন তার জন্য আফসোস করে। সবকিছুরই যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।নিশ্চয়ই যত্ন এবং অযত্নের ফল কখনো এক রকম হতে পারে না।যৌবনকে বলা যায় জীবনকে গঠন করার শ্রেষ্ঠ সময়।এই সময়ের সামান্য সচেতনতা এবং যত্ন জীবনকে করে তোলা যায় মূল্যবান এবং উপভোগ্য।আর এই সময়ের সামান্য ভূল হতে পারে সারা জীবনের জন্য অনুশোচনা আর গ্লানি বয়ে বেড়ানোর কারণ। এ কারণেই জ্ঞানি লোকেরা বলেন, ‘তুমি যৌবনের যত্ন নিলে বার্ধক্যে যৌবন তোমার যত্ন নিবে।’

বলা হয়ে থাকে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। জীবনে সুন্দর করে বেঁচে থাকার জন্য এবং মানুষ হিসেবে সমাজে, রাষ্ট্রে ও বিশ্বে যথার্থ ভূমিকা পালনের জন্য আমাদেরকে জীবনে বহু পরিশ্রম করতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবন চলার পথ ফুল বিছানো নয়। এখানে প্রতি পদে পদেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংগ্রাম আর প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ। এ কারণে জীবনে সফলতা পেতে হলে, মানুষের মত সম্মান ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে হলে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রাম সাধনার কোন বিকল্প নেই। এ জন্য শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের জীবনের প্রায় পুরো অংশটাই নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য ঠিক তো সব ঠিক। গবেষণায় দেখা যায় যারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তারা সকল দিক দিয়ে অন্য সকলের থেকে এগিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মন মেজাজ ভালো থাকে না, কোনো কাজে উৎসাহ আসে না। জীবনটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসে।


মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সর্বাধিক কর্মক্ষম সময়টি যৌবনকাল। মানবজীবনে কৈশোর-পরবর্তী বিশেষ অধ্যায়ের নাম যৌবন। বয়স ১৫ থেকে ৩০ কিংবা ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে তারাই তরুণ বা যুবক নামে অভিহিত। জাতিসংঘ সমীক্ষায় তরুণকে ২৫ বছরব্যাপী এক সুন্দর সময় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫ থেকে ৪০ এর মধ্যকার টগবগে ২৫টি বছরই তারণ্য বা যৌবনের প্রতিচ্ছবি। তবে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ ও অধিকাংশ রাষ্ট্র ১৫ থেকে ২৫ বছরের ১০ বছরকে তারুণ্য আর যৌবনের ফুটন্ত রূপ বলে মন্তব্য করেছে। 

জীবনকে মোটাদাগে শিশুকাল, যৌবন আর বার্ধক্য—এই তিনটি স্তরে ভাগ করা হলেও যৌবনই আসল জীবন। কারণ জীবনকে উপলব্ধি করার, ভোগ করার, সৃষ্টিশীলতা স্থাপন করার বা ধ্বংসশীল আচরণে মেতে ওঠার এটাই সময়। জীবনের যৌবন-পূর্ববর্তী অধ্যায় শিশুকাল আর যৌবনের পরবর্তী অধ্যায় বার্ধক্য, দুটি অধ্যায়ই দুর্বলতা ও অসহায়ত্বে পূর্ণ। শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা-অক্ষমতা মানুষকে এ দুটি পর্যায়ে পরনির্ভর করে রাখে। ফলে নিজের ব্যক্তিত্ব ও অস্তিত্বের সক্ষমতা এ পর্যায়ে প্রমাণের কোনো সুযোগ অনেকের জীবনেই থাকে না। 

মনোবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ যৌবনকে জীবনের ঝড় বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু যৌবনকে শুধু ঝড় বললে ভুলই বলা হয়। বরং যৌবন হলো এক অমীত শক্তির নাম, যাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে জীবন-সংসার সৃষ্টি-সৌন্দর্যে মোহনীয় হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে যৌবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে তার তাণ্ডবলীলায় জীবন ও জগৎ নরকে পরিণত হয়।আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী জি. স্ট্যানলি ঠিকই বলেছেন, adolesce is partly as an upheaval, a disruption of peaceful growth.

যৌবনই যে জীবনের শক্তি—এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বাণী হলো, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, এরপর জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে। অতঃপর তোমাদের তিনি বের করেন শিশুরূপে, তারপর তোমরা যৌবনে পদার্পণ করে থাকো, অবশেষে বার্ধক্যে উপনীত হও।-(সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬৭)
মানব জীবন মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে যৌবন।রাসুলুল্লাহ (স) আরো ইরশাদ করেন, ‘হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে- তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন করা হবে যৌবনকাল কিভাবে কাটিয়েছো’। (বুখারি)

প্রিয়নবী (স) ইরশাদ করেন, ৫টি জিনিসকে ৫টি জিনিসের পূর্বে গনিমত মনে করো। তন্মধ্যে একটি হলো বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে।(তিরমিজি শরিফ) স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তাই যত্নের প্রয়োজন। আর সঠিক যত্ন নিতে হলে জীবন, যৌবন, খাদ্য, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।এই মৌলিক বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ বা বেখবর থাকলে সঠিক যত্ন নেয়া কখনো সম্ভব হবে না।
-চলবে

Comments

Popular posts from this blog

ক্যারিয়ার গাইড: টেলিসেলস এক্সিকিউটিভ/কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি

যৌবনের যত্ন [চার]: পুরুষ হরমোন ঘাটতির ১০টি লক্ষণ

ডাটা এন্ট্রি: কর্মসংস্থানের সহজ মাধ্যম