পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরনের প্রভাব




মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

অন্তঃস্রাবী ব্যবস্থায়: 
দেহের অন্তঃস্রাবী ব্যবস্থা কতগুলো গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত, যা হরমোন উৎপাদন কাজে নিয়োজিত। হাইপোথ্যালামাস অগ্র মস্তিষ্কের একটি অংশ যা থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত। সেটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে জানিয়ে দেয় আপনার শরীরে কতটুকু টেসটোসটেরন দরকার, তারপর পিটুইটারি গ্রন্থি অন্ডকোষকে সেই বার্তা পাঠিয়ে দেয়। বেশিরভাগ টেসটোসটেরনই তৈরি হয় অন্ডকোষে, তবে অল্প পরিমাণ টেসটোসটেরন আসে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে, যা কিডনির ঠিক উপরে অবস্থিত। নারীদের ক্ষেত্রে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় অল্প পরিমাণে টেসটোসটেরন উৎপাদন করে থাকে। 
প্রকৃতপক্ষে, একটি ছেলে শিশুর জন্মের আগ থেকেই তার পুরুষ যৌনাঙ্গ গঠনের কাজ শুরু করে দেয় এই টেস্টোস্টেরণ হরমোন। বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেদের মধ্যে যে পুরুষোচিত  বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেমন ভরাট গলা বা কণ্ঠস্বর, পুরুষোচিত বাড়ন্ত শরীর, দাড়ি-গোফ গজানো ইত্যাদির মূলে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে টেসটোসটেরন। এটি অবশ্য পেশী ভর এবং যৌন উদ্দীপনা তৈরির পেছনেও ভূমিকা পালন করে। টেসটোসটেরন উৎপাদনের উত্তাল ঢেউ শুরু হয় বয়ঃসন্ধির সময় থেকে এবং এটি সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে ২০ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত। বয়স বিশ পার হলে পুরুষ হরমোন উৎপাদনের এই ঢেউ স্তিমিত হয়ে আসে এবং ৩০ বছর বয়সের পর থেকে পুরুষ মানুষের এই হরমোনের লেভেল প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কমতে থাকে।

প্রজনন ব্যবস্থায়:
মাতৃগর্ভে আসার সাত সপ্তাহ পর টেসটোসটেরন হরমোন ছেলে-শিশুর পুরুষ  যৌনাঙ্গ গঠনের কাজ শুরু করে দেয়। বয়ঃসন্ধির সময়, যখন টেসটোসটেরন  উৎপাদনের ঢেউ তুঙ্গে থাকে, তখন অন্ডকোষ এবং শিশ্ন বড় হতে থাকে। এ সময় অন্ডকোষ প্রবল গতিতে টেসটোসটেরন উৎপাদন করতে থাকে এবং প্রতিদিন নতুন শুক্রাণুর সরবরাহ তৈরি করে। বলাবাহুল্য এই সময়ে উৎপাদিত এই পুরুষ হরমোনের আধিক্যই ছেলেদের জীবনে যৌবনের প্রাচুর্য নিয়ে আসে এবং এই প্রাচুর্য কিন্তু একজন মানুষের সারা জীবনের পৌরুষ ও জীবনীশক্তির ভিত্তি বা ধনভান্ডার। কোন কারণে এ সময় যদি এই পুরুষ হরমোন ও বীর্য উৎপাদন ব্যাহত হয়(বড় ধরনের অসুখ-বিসুখের কারণে)কিংবা হয় এই জীবনীশক্তির অপচয় (বাল্যব বিবাহ কিংবা যৌন উচ্ছৃংখলার কারণে)তাহলে পরবর্তী জীবনে এই হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এর বিরূপ প্রভাবে  যৌন অক্ষমতা, শারীরিক শক্তি-সামর্থ নষ্ট হওয়া, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যৌন আবেদনে:
বয়ঃসন্ধির সময় টেসটোসটেরনের মাত্রা ক্রমবর্ধমান থাকায় অন্ডকোষ, লিঙ্গ এবং গুপ্ত লোম বড় হতে থাকে। এ সময় কণ্ঠস্বর গভীর হয়, মাংসপেশী এবং দেহের  লোম বৃদ্ধি পায়। এসব পরিবর্তনের পাশাপাশি বৃদ্ধি পেতে থাকে যৌন আকাক্সক্ষাও। এখানে ‘ব্যবহার কর অথবা হারাও’ তত্ত্বের বা ঁংব রঃ ড়ৎ ষড়ংব রঃ - ঃযবড়ৎু ‘র কিছুটা সত্যতা রয়েছে। অর্থাৎ যথাসময়ে বিয়ে করতে হবে। তা না হলে টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধির এই বিপুল প্রাচুর্য ব্যাহত হতে পারে। আর টেসটোসটেরনের মাত্রা কম হলে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষাও কমে যায়। কেননা, যৌন উদ্দীপনা এবং যৌন কার্যকলাপ টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। আর দীঘকাল যাবৎ যৌন নিষ্ক্রিয়তার ফলে  টেসটোসটেরনের মাত্রা কমে যায়। আর টেসটোসটেরনের স্বল্পতা পুরুষের উত্থান রোহিত সমস্যার বৎবপঃরষব ফুংভঁহপঃরড়হ (ঊউ) সৃষ্টি করে।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে:
মানুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র ব্যবস্থা হরমোন এবং রাসায়নিক পদার্থসমূহের মাধ্যমে রক্তস্রোতে বার্তা পাঠিয়ে এ কাজ করে। মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস (অগ্র মস্তিষ্কের একটি অংশ, যা থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত), সেটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে জানিয়ে দেয় আপনার শরীরে কতটুকু টেসটোসটেরন দরকার, তারপর পিটুইটারি গ্রন্থি অন্ডকোষকে  সেই বার্তা পাঠিয়ে দেয়।

পুরুষের কিছু নির্দিষ্ট আচরণের উপর টেস্টোস্টেরনের প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শক্তি প্রয়োগ এবং কর্তৃত্বপরায়ন্তা বা বলিষ্ঠতার স্বভাবও। এটি প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্বিতা উস্কে দিতে এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। শুধুমাত্র যৌন কার্যকলাপ যেমন টেসটোসটেরনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করা বা না করাও একটি মানুষের টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধি বা পতনের কারণ হতে পারে।  টেসটোসটেরনের ঘাততি আত্মবিশ্বাস এবং উদ্দীপনার ঘাটতিরও কারণ হতে পারে। এটি একজন মানুষের মনোযোগের ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে এবং বিষণ্ন অনুভূতিরও কারণ হতে পারে। টেসটোসটেরনের অভাব ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং মানুষ শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

তবে এটা মনে রাখা জরুরী, মানুষের ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্যের উপর টেস্টোস্টেরনের একটি বিরাট ও অনন্য ভূমিকা রয়েছে; সেই সাথে অন্যান্য জৈবিক এবং পরিবেশগত বিষয়গুলিও কিন্তু ক্রিয়াশীল ও সম্পৃক্ত রয়েছে। 

ত্বক ও চুলে:
শৈশব থেকে বয়ঃপ্রাপ্তির রূপান্তরের লক্ষণ হিসেবে টেস্টোস্টেরন মানুষের মুখে, বগলে এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে লোম গজানোর উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বাহু, পা এবং বুকেও লোম বা চুল গজায় এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবেই। তবে টেস্টোস্টেরনের যথোচিত মাত্রার অভাবে কারো শরীরে লোম বা চুল কম হতে পারে।

পেশী, চর্বি, এবং হাড় গঠনে
মানবদেহের বিশাল বপুর পেশি গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধির পেছনে ক্রিয়াশীল অনেকগুলো উপাদান বা ফ্যাক্টরগুলোর অন্যতম হল টেস্টোস্টেরন। এটি নিউরোট্র্রান্সমিটার  সমূহের বৃদ্ধি ঘটায়, যেগুলো টিস্যু বৃদ্ধিতে উদ্দীপনা যোগায়। 

এটি ডিএনএ মধ্যস্থিত পারমাণবিক রিসেপ্টর সমূহের সাথেও মিথস্ক্রিয়া করে, যার ফলে প্রোটিন সংশ্লেষণ হয়। টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি সংক্রান্ত হরমোন সমূহের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা সম্ভাব্য পেশী গঠনের তৎপরতাকে জোরদার করে।

টেস্টোস্টেরন হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের মজ্জাকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের নির্দেশনা দেয়। যাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা খুব কম তাদের হাড়ে ফাটল দেখা দিতে পারে এমনকি অল্প চাপে ভেঙ্গেও যেতে পারে।

টেসটোসটেরন চর্বি বিপাকের  ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে, যা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পুরুষদের শরীরের মেদ পোড়াতে সাহায্য করে। টেসটোসটেরন মাত্রার ঘাটতি বা পতনের কারণে চর্বি বিপাক বা বার্ন হয় না এবং এর ফলে শরীরে মেদ জমে স্থূলতা (ঙনবংরঃু) সৃষ্টি করে।

সংবহনতন্ত্র বা সার্কুলেটরি সিস্টেমে:
টেসটোসটেরন রক্তস্রোতের  মাধ্যমে সারা শরীরে পরিভ্রমণ করে।আপনি যদি নিশ্চিতভাবে আপনার টেসটোসটেরন মাত্রার সঠিক অবস্থা জানতে চান, তাহলে তার একমাত্র উপায় হল পরিমাপ করা। সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই তা করা হয়।

টেস্টোস্টেরন অস্থি-মজ্জার লোহিত রক্ত-কণিকা উৎপাদনে উদ্দীপনা যোগায়।আর গবেষণায় পাওয়া যায়, টেস্টোস্টেরন হৃদপি-ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কয়েকটি গবেষণায় কোলেস্টেরল, রক্তচাপের উপর টেসটোসটেরনের প্রভাবের মিশ্র ফলাফল পাওয়া যায়।

উপসংহার
২৫-৩০ বছর বয়স থেকেই একজন মানুষের টেসটোসটেরনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। এটা একটা সমস্যা। কারণ, গবেষণায় এটা জোরালোভাবে দেখা গেছে যে, স্বল্প মাত্রার টেসটোস্টেরনের সাথে স্থূলতা বা  মেদবাহুল্য, রোগের ঝুঁকিবৃদ্ধি এবং অকালমৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। 

গবেষণায় আরো পাওয়া যায়, এটি এমনকি নারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ; তাদের অন্যান্য প্রধান হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের পাশাপাশি টেসটোস্টেরনের লেভেলও যথেষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত টসটোস্টেরনের লেভেল সর্বোচ্চ মাত্রায় রাখতে তাদের জীবনধারায় বা লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। 
দেহের অন্তঃস্রাবী ব্যবস্থা কতগুলো গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত, যা হরমোন উৎপাদন কাজে নিয়োজিত। হাইপোথ্যালামাস অগ্র মস্তিষ্কের একটি অংশ যা থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত। সেটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে জানিয়ে দেয় আপনার শরীরে কতটুকু টেসটোসটেরন দরকার, তারপর পিটুইটারি গ্রন্থি অন্ডকোষকে সেই বার্তা পাঠিয়ে দেয়। বেশিরভাগ টেসটোসটেরনই তৈরি হয় অন্ডকোষে, তবে অল্প পরিমাণ টেসটোসটেরন আসে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে, যা কিডনির ঠিক উপরে অবস্থিত। নারীদের ক্ষেত্রে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় অল্প পরিমাণে টেসটোসটেরন উৎপাদন করে থাকে। 
প্রকৃতপক্ষে, একটি ছেলে শিশুর জন্মের আগ থেকেই তার পুরুষ যৌনাঙ্গ গঠনের কাজ শুরু করে দেয় এই টেস্টোস্টেরণ হরমোন। বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেদের মধ্যে যে পুরুষোচিত  বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেমন ভরাট গলা বা কণ্ঠস্বর, পুরুষোচিত বাড়ন্ত শরীর, দাড়ি-গোফ গজানো ইত্যাদির মূলে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে টেসটোসটেরন। এটি অবশ্য পেশী ভর এবং যৌন উদ্দীপনা তৈরির পেছনেও ভূমিকা পালন করে। টেসটোসটেরন উৎপাদনের উত্তাল ঢেউ শুরু হয় বয়ঃসন্ধির সময় থেকে এবং এটি সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে ২০ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত। বয়স বিশ পার হলে পুরুষ হরমোন উৎপাদনের এই ঢেউ স্তিমিত হয়ে আসে এবং ৩০ বছর বয়সের পর থেকে পুরুষ মানুষের এই হরমোনের লেভেল প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কমতে থাকে।

প্রজনন ব্যবস্থায়:
মাতৃগর্ভে আসার সাত সপ্তাহ পর টেসটোসটেরন হরমোন ছেলে-শিশুর পুরুষ  যৌনাঙ্গ গঠনের কাজ শুরু করে দেয়। বয়ঃসন্ধির সময়, যখন টেসটোসটেরন  উৎপাদনের ঢেউ তুঙ্গে থাকে, তখন অন্ডকোষ এবং শিশ্ন বড় হতে থাকে। এ সময় অন্ডকোষ প্রবল গতিতে টেসটোসটেরন উৎপাদন করতে থাকে এবং প্রতিদিন নতুন শুক্রাণুর সরবরাহ তৈরি করে। বলাবাহুল্য এই সময়ে উৎপাদিত এই পুরুষ হরমোনের আধিক্যই ছেলেদের জীবনে যৌবনের প্রাচুর্য নিয়ে আসে এবং এই প্রাচুর্য কিন্তু একজন মানুষের সারা জীবনের পৌরুষ ও জীবনীশক্তির ভিত্তি বা ধনভান্ডার। কোন কারণে এ সময় যদি এই পুরুষ হরমোন ও বীর্য উৎপাদন ব্যাহত হয়(বড় ধরনের অসুখ-বিসুখের কারণে)কিংবা হয় এই জীবনীশক্তির অপচয় (বাল্যব বিবাহ কিংবা যৌন উচ্ছৃংখলার কারণে)তাহলে পরবর্তী জীবনে এই হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং এর বিরূপ প্রভাবে  যৌন অক্ষমতা, শারীরিক শক্তি-সামর্থ নষ্ট হওয়া, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যৌন আবেদনে:
বয়ঃসন্ধির সময় টেসটোসটেরনের মাত্রা ক্রমবর্ধমান থাকায় অন্ডকোষ, লিঙ্গ এবং গুপ্ত লোম বড় হতে থাকে। এ সময় কণ্ঠস্বর গভীর হয়, মাংসপেশী এবং দেহের  লোম বৃদ্ধি পায়। এসব পরিবর্তনের পাশাপাশি বৃদ্ধি পেতে থাকে যৌন আকাক্সক্ষাও। এখানে ‘ব্যবহার কর অথবা হারাও’ তত্ত্বের ‘র কিছুটা সত্যতা রয়েছে। অর্থাৎ যথাসময়ে বিয়ে করতে হবে। তা না হলে টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধির এই বিপুল প্রাচুর্য ব্যাহত হতে পারে। আর টেসটোসটেরনের মাত্রা কম হলে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষাও কমে যায়। কেননা, যৌন উদ্দীপনা এবং যৌন কার্যকলাপ টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে। আর দীঘকাল যাবৎ যৌন নিষ্ক্রিয়তার ফলে  টেসটোসটেরনের মাত্রা কমে যায়। আর টেসটোসটেরনের স্বল্পতা পুরুষের উত্থান রোহিত সমস্যার  সৃষ্টি করে।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে:
মানুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র ব্যবস্থা হরমোন এবং রাসায়নিক পদার্থসমূহের মাধ্যমে রক্তস্রোতে বার্তা পাঠিয়ে এ কাজ করে। মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস (অগ্র মস্তিষ্কের একটি অংশ, যা থ্যালামাসের ঠিক নিচে অবস্থিত), সেটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে জানিয়ে দেয় আপনার শরীরে কতটুকু টেসটোসটেরন দরকার, তারপর পিটুইটারি গ্রন্থি অন্ডকোষকে  সেই বার্তা পাঠিয়ে দেয়।
পুরুষের কিছু নির্দিষ্ট আচরণের উপর টেস্টোস্টেরনের প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শক্তি প্রয়োগ এবং কর্তৃত্বপরায়ন্তা বা বলিষ্ঠতার স্বভাবও। এটি প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্বিতা উস্কে দিতে এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। শুধুমাত্র যৌন কার্যকলাপ যেমন টেসটোসটেরনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করা বা না করাও একটি মানুষের টেসটোসটেরনের মাত্রা বৃদ্ধি বা পতনের কারণ হতে পারে।  টেসটোসটেরনের ঘাততি আত্মবিশ্বাস এবং উদ্দীপনার ঘাটতিরও কারণ হতে পারে। এটি একজন মানুষের মনোযোগের ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে এবং বিষণ্ন অনুভূতিরও কারণ হতে পারে। টেসটোসটেরনের অভাব ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং মানুষ শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

তবে এটা মনে রাখা জরুরী, মানুষের ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্যের উপর টেস্টোস্টেরনের একটি বিরাট ও অনন্য ভূমিকা রয়েছে; সেই সাথে অন্যান্য জৈবিক এবং পরিবেশগত বিষয়গুলিও কিন্তু ক্রিয়াশীল ও সম্পৃক্ত রয়েছে। 

ত্বক ও চুলে:
শৈশব থেকে বয়ঃপ্রাপ্তির রূপান্তরের লক্ষণ হিসেবে টেস্টোস্টেরন মানুষের মুখে, বগলে এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে লোম গজানোর উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বাহু, পা এবং বুকেও লোম বা চুল গজায় এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবেই। তবে টেস্টোস্টেরনের যথোচিত মাত্রার অভাবে কারো শরীরে লোম বা চুল কম হতে পারে।

পেশী, চর্বি, এবং হাড় গঠনে
মানবদেহের বিশাল বপুর পেশি গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধির পেছনে ক্রিয়াশীল অনেকগুলো উপাদান বা ফ্যাক্টরগুলোর অন্যতম হল টেস্টোস্টেরন। এটি নিউরোট্র্রান্সমিটার সমূহের বৃদ্ধি ঘটায়, যেগুলো টিস্যু বৃদ্ধিতে উদ্দীপনা যোগায়। 

এটি ডিএনএ মধ্যস্থিত পারমাণবিক রিসেপ্টর সমূহের সাথেও মিথস্ক্রিয়া করে, যার ফলে প্রোটিন সংশ্লেষণ হয়। 

টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি সংক্রান্ত হরমোন সমূহের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা সম্ভাব্য পেশী গঠনের তৎপরতাকে জোরদার করে। 

টেস্টোস্টেরন হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের মজ্জাকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের নির্দেশনা দেয়। যাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা খুব কম তাদের হাড়ে ফাটল দেখা দিতে পারে এমনকি অল্প চাপে ভেঙ্গেও যেতে পারে।

টেসটোসটেরন চর্বি বিপাকের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে, যা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পুরুষদের শরীরের মেদ পোড়াতে সাহায্য করে। টেসটোসটেরন মাত্রার ঘাটতি বা পতনের কারণে চর্বি বিপাক বা বার্ন হয় না এবং এর ফলে শরীরে মেদ জমে স্থূলতা (ঙনবংরঃু) সৃষ্টি করে।

সংবহনতন্ত্র বা সার্কুলেটরি সিস্টেমে:
টেসটোসটেরন রক্তস্রোতের মাধ্যমে সারা শরীরে পরিভ্রমণ করে।আপনি যদি নিশ্চিতভাবে আপনার টেসটোসটেরন মাত্রার সঠিক অবস্থা জানতে চান, তাহলে তার একমাত্র উপায় হল পরিমাপ করা। সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই তা করা হয়।

টেস্টোস্টেরন অস্থি-মজ্জার লোহিত রক্ত-কণিকা উৎপাদনে উদ্দীপনা যোগায়।আর গবেষণায় পাওয়া যায়, টেস্টোস্টেরন হৃদপি-ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কয়েকটি গবেষণায় কোলেস্টেরল, রক্তচাপের উপর টেসটোসটেরনের প্রভাবের মিশ্র ফলাফল পাওয়া যায়।

উপসংহার
২৫-৩০ বছর বয়স থেকেই একজন মানুষের টেসটোসটেরনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। এটা একটা সমস্যা। কারণ, গবেষণায় এটা জোরালোভাবে দেখা গেছে যে, স্বল্প মাত্রার টেসটোস্টেরনের সাথে স্থূলতা বা  মেদবাহুল্য, রোগের ঝুঁকিবৃদ্ধি এবং অকালমৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। 

গবেষণায় আরো পাওয়া যায়, এটি এমনকি নারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ; তাদের অন্যান্য প্রধান হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের পাশাপাশি টেসটোস্টেরনের লেভেলও যথেষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত টসটোস্টেরনের লেভেল সর্বোচ্চ মাত্রায় রাখতে তাদের জীবনধারায় বা লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। #

Comments

Popular posts from this blog

ক্যারিয়ার গাইড: টেলিসেলস এক্সিকিউটিভ/কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি

যৌবনের যত্ন [চার]: পুরুষ হরমোন ঘাটতির ১০টি লক্ষণ

যৌবনের যত্ন [তিন]: পুরুষদের দেহে টেস্টোস্টেরনের প্রভাব